অই

এডুলিচার শব্দকোষ

১. অই

অই / ɔi / ai

সর্বনাম

  1. পুরোভাগে; ইন্দ্রিয় গোচরে; সম্মুখে; সম্মুখস্থ; পুরোবর্তী। ‘অই যে জগৎ জাগে, স্বদেশ অনুরাগে।’—কালীপ্রসন্ন কাব্যবিশারদ।
  2. ওখানে; যে স্থানে বিরাজ করছে ঠিক সেই স্থানে। ‘অই শশী অই খানে, এই স্থানে দুইজনে,’—হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়।
  3. অদূরে; নাতিদূরস্থ। ‘রাম কৃষ্ণ দুই ভাই ক্ষুধায় আকুল। ধেনু চরায়ে অই কাননে অদূর॥’—শ্রীকৃষ্ণমঙ্গল।
  4. দূরে; দূরস্থ। ‘সকল অর্পিনু মুঞি অই শ্রীচরণে’—ভক্তমাল গ্রন্থ। ‘অই ঠাকুরের কেশ শোভে নানা ফুলে’—চৈতন্য ভাগবত।
  5. বুদ্ধিস্থ বিষয়-নির্দেশ; উহা; সে; সেই; তা (তাহা)। ‘এই জিয়া থাক সই’—কবিকঙ্কন চণ্ডী। ‘অভাগীর ভাড়া অই : অন্ধার মাণিক অই’—শ্রীধর্মমঙ্গল।
  6. অনন্য; নির্দিষ্ট।
  7. উক্ত; উল্লিখিত।
  8. স্মরণ সূচক।
  9. দোষ বা ভয় প্রর্দশন সূচক। উচ্চারণ সাদৃশ্য হেতু ‘অই’ স্থলে পদ্যে ‘ওই’ সংক্ষেপে ‘ও’ এবং ‘ঐ’ [ঐ, ও, ওই দ্রষ্টব্য] ব্রজবুলি, প্রাচীন বৈষ্ণব সাহিত্য, ‘অই’ স্থলে ‘ও’ এবং ‘উহ’। ‘উহ রসময়ী ইহ রসিক-শিরোমণি,’—জ্ঞানদাস। ‘ও নব জলধর অঙ্গ। ইহথির বিজুরী তরঙ্গ।’—গোবিন্দ দাস।

ক্রিয়া-বিশেষণ

  1. সম্মুখে; দূরে; নাতিদূরে; পুরোভাগে। ‘অই দেখ গান করে নারী পতিহীনা / এই দেখ নৃত্য করে হাতে অস্ত্র ধরি’—কাশীদাসী মহাভারত। ‘দুর্জয় গড় অই’—শ্রীধর্মমঙ্গল। ‘বকুলতলায় বসিয়া অই’, ‘কালিকা আকাশে অই’—ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর। ‘শারি কহে কই তব তমালিকা কই। শুক বলে অই দেখ ডালে বসে অই॥’—বাসবদত্তা।
  2. দূরশ্রুত ধ্বনির নির্দেশ। ‘অই শুন অই শুন ভেরীর আওয়াজ।’—রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘এই কুহরিল পিক ললিত উচ্ছ্বাসে।’—হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘নিশি অন্ত জেনে ডাকিছে অই কোকিল’—নিধিবাবু।
  3. দূরস্থ দৃশ্যনির্দেশ। ‘অই যে অবনীতলে, পরশমাণিক জ্বলে, বিধাতা-নির্ম্মিত চারু মানব-নয়ন।’—হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়।

অব্যয়

  1. বিস্মৃত বিষয়ে হঠাৎ স্মরণে। ‘অই যা, তাড়াতাড়িতে সব ভুলেছি।’
  2. রোষে। ‘অই! আবার সেই কথা, মারব!’

ব্যুৎপত্তি

  1. সংস্কৃত, অদস্ প্রথমা, বহু বচন—অমী = প্রাকৃত, অঈ; বৌদ্ধ বাংলায় অই (চর্যাপদ ২৬। ২) = আধুনিক বাংলা অই (পদ্যে ও সঙ্গীতে) = ঐ (গদ্যে এবং ছন্দার্থে পদ্যে)। — জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস।
  2. সংস্কৃত অসৌ > প্রাকৃত অহ (হে), অপভ্রংশ প্রাকৃত ওই (প্রথমা বহু বচন, সিদ্ধহেমচন্দ্র, শঙ্কর পাণ্ডুরঙ্গ পণ্ডিত সম্পাদিত) বাংলা (ই-আগমে ‘অহি’) অই; হিন্দি ৱহ; মৈথিলি ওহি। — হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়।

২. অই

অই / ɔi / ai

ক্রিয়া বিভক্তি

কর্তৃবাচ্যে বর্তমান কালে প্রথম পুরুষের ক্রিয়ার বিভক্তি। ‘অগ্নিরে দহিলে পিণ্ড হুবই যে ধূলি’; ‘দেবী কি শীতল ভোগ দিঅই বহুত : গুরুর আজ্ঞএ মোক্ষ হুঅই পিণ্ডকু।’—বঙ্গসাহিত্য পরিচয়।

ব্যুৎপত্তি

সংস্কৃত (আগম) অ + তি (লট্) > প্রাকৃত অ + ই — অই, যেমন সংস্কৃত ভৱতি > প্রাকৃত হৱই (হে); অপ্রচলিত।

বাঙ্গালা ভাষার অভিধান

অ̑ই

  [সংস্কৃত, অদস্ প্রথমা, বহু বচন— অমী = প্রাকৃত, অঈ; বৌদ্ধ বাংলায় অই (চর্য্যাপদ ২৬।২) = আধুনিক বাংলা অই (পদ্যে ও সঙ্গীতে) = ঐ (গদ্যে এবং ছন্দার্থে পদ্যে)] অব্যয়, পুরোভাগে; ইন্দ্রিয় গোচরে; সম্মুখে। “অই যে জগৎ জাগে, স্বদেশ অনুরাগে।” —কালীপ্রসন্ন কাব্যবিশারদ। ওখানে; যথায় বিরাজ করিতেছে ঠিক সেই স্থানে। “অই শশী অই খানে, এই স্থানে দুইজনে,” —হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। অদূরে। দূরে। অনন্য; নির্দ্দিষ্ট। উক্ত; উল্লিখিত। স্মরণ সূচক। দোষ বা ভয় প্রর্দশন সূচক। উচ্চারণ সাদৃশ্য হেতু ‘অই’ স্থলে পদ্যে ‘ওই’ সংক্ষেপে ‘ও’ এবং ‘ঐ’ [ঐ, ও, ওই দ্রষ্টব্য] ব্রজবুলি, প্রাচীন-বৈষ্ণব-সাহিত্য, ‘অই’ স্থলে ‘ও’ এবং ‘উহ’। “উহ রসময়ী ইহ রসিক-শিরোমণি,” —জ্ঞানদাস। “ও নব জলধর অঙ্গ। ইহথির বিজুরী তরঙ্গ।” —গোবিন্দ দাস।

বঙ্গীয় শব্দকোষ

১. অই

  সর্ব্ব, বিং [সং অসৌ > প্রা অহ (হে), অপভ্রংশ প্রা—ওই (১মা-বহুব, হে ৪। ৩৬৪) > বা (ই-আগমে ‘অহি’) অই; হি ৱহ; মৈ ওহি; আহঁ—এই (চ)] সম্মুখস্থ, পুরোবর্ত্তী, দূরস্থ, নাতিদূরস্থ। “রাম কৃষ্ণ দুই ভাই ক্ষুধায় আকুল। ধেনু চরায়ে অই কাননে অদূর॥ শ্রী. ম ৭১। সকল অর্পিনু মুঞি অই শ্রীচরণে ভ. গ্র ৪১৪। অই ঠাকুরের কেশ শোভে নানা ফুলে চৈ ভা ৩২৬। বুদ্ধিস্থ, মনস্থিত। “ভগবান্ নিত্য যেন তেন অই শক্তি দু ৪৬। অই মম তপ, অই মম জপ স্ব প্র ৬। সেই, তাহা পূর্ব্বোক্ত, তাদৃশ। “আট দিগে ভাল বর চাহে লক্ষপতি। অবিরত অই চিন্তা স্থির নহে মতি॥ ক.চ ১১৪; উহারি হাতে রাঙ্গা শাঁখা অই বরণে গৌরী ১৫৪। চাঁপায়ে প্রভুর আজ্ঞা সদা মনে অই শ্রী ৩৯। [হি ৱহ] সেই, তদভিন্ন (That very)।—ই সর্ব্ব সম্মুখে  দূরস্থ বা নাতি দূরস্থ নয়নগোচর বিষয়—মনুষ্যাদি; ঐ, ও। “অই কি জানে স্ত্রীকলা ক.চ ১৫৪। কে রমণী অই পথে পথে গাই। —হেম ১৮৪; ভারতের “গ্রীন্-উইচ” অই আগেকার ৩৬২। বুদ্ধিস্থ বিষয়-নির্দ্দেশ; উহা, সে, সেই, তাহা। “অই জিয়া থাক সই ক.চ ৪৬। অভাগীর ভাড়া অই : অন্ধার মাণিক অই শ্রী ৬৭। — ই ক্রি.বিং সম্মুখে, দূরে, নাতিদূরে, পুরোভাগে। “অই দেখ গান করে নারী পতিহীনা : অই দেখ নৃত্য করে হাতে অস্ত্র ধরি ম ১০০৭। দুর্জয় গড় অই শ্রী ১৭৯। বকুলতলায় বসিয়া অই ভা.চ ১৭৬; কালিকা আকাশে অই ৪৩৮। শারি কহে কই তব তমালিকা কই। শুক বলে অই দেখ ডালে বসে অই॥ বা.দ ১৬৭। দূরশ্রুত ধ্বনির নির্দ্দেশ। “অই শুন অই শুন ভেরীর আওয়াজ। — রঙ্গ ১০৭। অই কুহরিল পিক ললিত উচ্ছ্বাসে। —হেম ২৭০। নিশি অন্ত জেনে ডাকিছে অই কোকিলে (নিধুবাবু)। দূরস্থ দৃশ্যনির্দ্দেশ। “অই যে অবনীতলে, পরশমাণিক জ্বলে, বিধাতা-নির্ম্মিত চারু মানব-নয়ন। — হেম ২৯০। — ই অব্য বিস্মৃত বিষয়ের হঠাৎ স্মরণে। “অই যা, তাড়াতাড়িতে সব ভুলেছি! রোষে। “অই! আবার সেই কথা, মারব!

২. অই

  ক্রি ক্তি [সং (আগম) অ + তি (লট্) > প্রা অ + ই — অই, যেমন সং ভরতি > প্রা হৱই (হে); অপ্র] কর্ত্তৃবাচ্যে বর্ত্তমান কালে প্রথম পুরুষের ক্রিয়ার বিভক্তি। “অগ্নিরে দহিলে পিণ্ড হুবই যে ধূলি ব.প ৮৯; দেবী কি শীতল ভোগ দিঅই বহুত : গুরুর আজ্ঞএ মোক্ষ হুঅই পিণ্ডকু ৯০।

সংসদ বাংলা অভিধান

অই

  ঐ-এর বানানভেদ। ওই, সেই, উল্লিখিত, সম্মুখস্থ (ঐ লোকটি ওই বিষয়)। ☐ অব্য. অদূরে, সেখানে, দূরে কিন্তু ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যভাবে (‘সখী, ওই বুঝি বাঁশি বাজে’: রবীন্দ্র); ২ সম্বোধন স্মরণ খেদ ইত্যাদি সূচক ধ্বনি (ঐ দেখ, ভুলে গেছি; ঐ যা, বইটা আনিনি)। [সং. অদস্]।

বিবর্তনমূলক বাংলা অভিধান

অই

  সর্ব সে। ‘জখনে জম্মিল অই বাপের ভবনে।’ মালাধর, ১৫০০। বিণ ওই। ‘অই ঠাকুরের কেশ শোভে নানা ফুলে।’ বৃন্দা, ১৫৮০। সর্ব সেই। ‘অই নিমিত্তে সদাই কলি মোর কর্মের ফল।’ মুকুন্দ, ১৬০০।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ

শব্দসূত্র