সংস্কৃত বা তৎসম শব্দ
-
১. রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব
— রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হইবে না, যথা— ‘অর্চনা, মূর্ছা, অর্জুন, কর্তা, কার্তিক, কর্দম, বার্ধক্য, কর্ম, সর্ব’।
-
২. সন্ধিতে ঙ্-স্থানে অনুস্বার
— যদি ক খ গ ঘ পরে থাকে তবে পদের অন্তস্থিত ম্-স্থানে অনুস্বার অথবা বিকল্পে ঙ্ বিধেয়, যথা— ‘অহংকার, ভয়ংকর, শুভংকর, সংখ্যা, হৃদয়ংগম, সংঘটন,’ অথবা ‘অহঙ্কার, ভয়ঙ্কর, ইত্যাদি।
অ-সংস্কৃত অর্থাৎ তদ্ভব, দেশজ ও বিদেশী শব্দ
-
৩. রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব
— রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হইবে না, যথা— ‘কর্জ, শর্ত, পর্দা, সর্দার, চর্বি, ফর্মা, জার্মানি’।
-
৪. হস্-চিহ্ন
— শব্দের শেষে সাধারণতঃ হস্-চিহ্ন দেওয়া হইবে না, যথা— ‘ওস্তাদ, কংগ্রেস, চেক, জজ, টন, টি-পট, ট্রাম, ডিশ, তছনছ, পকেট, মক্তব, হক, করিলেন, করিস’। কিন্তু যদি ভুল উচ্চারণের সম্ভাবনা থাকে তবে হস্-চিহ্ন দেওয়া যাইতে পারে। হ এবং যুক্ত ব্যঞ্জনের উচ্চারণ সাধারণতঃ স্বরান্ত, যথা — ‘দহ, অহরহ, কাণ্ড, গঞ্জ’। যদি হসন্ত উচ্চারণ অভীষ্ট হয় তবে হ ও যুক্ত ব্যঞ্জনের পর হস্-চিহ্ন দেওয়া উচিত, যথা— ‘শাহ্, তখ্ত্, জেম্স্ বণ্ড্। কিন্তু সুপ্রচলিত শব্দে না দিলে চলিবে, যথা— ‘আর্ট, কর্ক, গভর্নমেন্ট, স্পঞ্জ’। মধ্য-বর্ণে প্রয়োজন হইলে হস্-চিহ্ন বিধেয়, যথা— ‘উল্কি, সট্কা’। যদি উপান্ত্য স্বর অত্যন্ত হ্রস্ব হয় তবে শেষে হস্-চিহ্ন বিধেয়, যথা— ‘কট্কট্, খপ্, সার্’।
বাংলার কতকগুলি শব্দের শেষে অ-কার উচ্চারিত হয়, যথা—গলিত, ঘন, দৃঢ়, প্রিয়, করিয়াছ, করিত, ছিল, এস। কিন্তু অধিকাংশ শব্দের শেষের অ-কার গ্রস্ত অর্থাৎ শেষ অক্ষর হসন্তবৎ, যথা—অচল, গভীর, পাঠ, করুক, করিস, করিলেন। এই প্রকার সুপরিচিত শব্দের শেষে অ-ধ্বনি হইবে কি হইবে না তাহা বুঝাইবার জন্য কেহই চিহ্ন প্রয়োগ করেন না। অধিকাংশ স্থলে অ-সংস্কৃত শব্দে অন্ত্য হস্-চিহ্ন অনাবশ্যক, বাংলাভাষার প্রকৃতি অনুসারেই হসন্ত-উচ্চারণ হইবে। অল্প কয়েকটি বিদেশী শব্দের শেষে অ উচ্চারণ হয়, যথা—বাই-ল কিন্তু প্রভেদরক্ষার জন্য অপর বহু বহু শব্দে হস্-চিহ্নের ভার চাপান অনাবশ্যক। কেবল ভুল উচ্চারণের সম্ভাবনা থাকিলে হস্-চিহ্ন বিধেয়।
-
৫. ই ঈ উ ঊ
— যদি মূল সংস্কৃত শব্দে ঈ বা ঊ থাকে তবে তদ্ভব বা তৎসদৃশ শব্দে ঈ বা ঊ অথবা বিকল্পে ই বা উ হইবে, যথা—কুমীর, পাখী, বাড়ী, শীষ, ঊনিশ, চূন, পূব অথবা কুমির, পাখি, বাড়ি, শিষ, উনিশ, চুন, পুব। কিন্তু কতকগুলি শব্দে কেবল ঈ, কেবল ই অথবা উ হইবে, যথা— নীলা (নীলক), হীরা (হীরক); দিয়াশলাই (দীপশলাকা), খিল (কীল), পানি (পানীয়); চুল (চুল), তাডু (তর্দু), জুয়া (দ্যুত)।
স্ত্রীলিঙ্গ এবং জাতি, ব্যক্তি, ভাষা ও বিশেষণ-বাচক শব্দের অন্তে ঈ হইবে, যথা—কলুনী, বাঘিনী, কাবুলী, কেরানী, ঢাকী, ফরিয়াদী, ইংরেজী, বিলাতী, দাগী, রেশমী। কিন্তু কতকগুলি শব্দে ই হইবে, যথা—ঝি, দিদি, বিবি; কচি, মিহি, মাঝারি, চলতি। পিসী, মাসী স্থানে বিকল্পে পিসি মাসি লেখা চলিবে।
অন্যত্র মনুষ্যেতর জীব, বস্তু, গুণ, ভাব ও কর্মবাচক শব্দের এবং দ্বিরাবৃত্ত শব্দের অন্তে কেবল ই হইবে, যথা— বেঙাচি, বেজি, কাঠি, সুজি, কেরামতি, চুরি, পাগলামি, বাবুগিরি, তাড়াতাড়ি, সরাসরি, সোজাসুজি। নবাগত বিদেশী শব্দে ঈ ঊ প্রয়োগ-সম্বন্ধে পরে দ্রষ্টব্য।
-
৬. জ য
— এইসকল শব্দে য না লিখিয়া জ লেখা বিধেয়, যথা—কাজ, জাউ, জাঁতা, জাঁতি, জুই, জুত, জো, জোড়, জোত, জোয়ান।
-
৭. ণ ন
— অ-সংস্কৃত শব্দে কেবল ‘ন’ হইবে, যথা— কান, সোনা, বামুন, কোরান, করোনার। কিন্তু যুক্তাক্ষর ‘ণ্ট, ণ্ঠ, ণ্ড, ণ্ঢ চলিবে, যথা—ঘুণ্টি, লুণ্ঠন, ঠাণ্ডা।
‘রানী’ স্থানে বিকল্পে ‘রাণী’ চলিতে পারিবে।
-
৮. ও-কার ও ঊর্ধ্বকমা প্রভৃতি
— সুপ্রচলিত শব্দের উচ্চারণ, উৎপত্তি বা অর্থের ভেদ বুঝাইবার জন্য অতিরিক্ত ও-কার, ঊর্ধ্ব-কমা বা অন্য চিহ্ন যোগ যথাসম্ভব বর্জনীয়। যদি অর্থগ্রহণে বাধা হয় তবে কয়েকটি শব্দে অন্ত্য অক্ষরে ও-কার এবং আদ্য বা মধ্য অক্ষরে ঊর্ধ্ব-কমা বিকল্পে দেওয়া যাইতে পারে, যথা— কাল, কালো; ভাল, ভালো; মত, মতো; পড়ো, প’ড়ো (পড়ুয়া বা পতিত)।
এই সকল বানান বিধেয়— এত, কত, যত, তত; তো, হয়তো; কাল (সময়, কল্য), চাল (চাউল, ছাত, গতি), ডাল (ডাইল, শাখা)।
-
৯. ং ঙ
— ‘বাঙ্গলা, বাঙ্গালা, বাঙ্গালী, ভাঙ্গন’ প্রভৃতি ‘বাংলা, বাঙলা, বাঙালী, ভাঙন’ প্রভৃতি উভয়প্রকার বানানই চলিবে। হসন্ত-ধ্বনি হইলে বিকল্পে ং ঙ বিধেয়, যথা— ‘রং, রঙ; সং, সঙ; বাংলা, বাঙলা’। স্বরাশ্রিত হইলে ঙ বিধেয়, যথা— ‘রঙের, বাঙালী, ভাঙন’।
-
১০. ং ও ঙ
-র প্রাচীন উচ্চারণ যাহাই হউক, আধুনিক বাংলা উচ্চারণ সমান, সেজন্য অনুস্বার স্থানে বিকল্পে ঙ লিখিলে আপত্তির কারণ নাই। ‘রং-এর’ অপেক্ষা ‘রঙের’ লেখা সহজ। ‘রঙ্গের’ লিখিলে অভীষ্ট উচ্চারণ আসিবে না, কারণ ‘রঙ্গ’ ও ‘রং’-এর উচ্চারণ সমান নয়, কিন্তু ‘রং’ ও ‘রঙ’ সমান।
-
১১. শ ষ স
— মূল সংস্কৃত শব্দ-অনুসারে তদ্ভব শব্দে শ ষ বা স হইবে, যথা—আঁশ (অংশ), আঁষ (আমিষ), শাঁস (শস্য), মশা (মশক), পিসী (পিতুঃস্বসা)! কিন্তু কতকগুলি শব্দে ব্যতিক্রম হইবে, যথা— মিসে (মনুষ্য), সাধ (শ্রদ্ধা)।
বিদেশী শব্দে মূল উচ্চারণ-অনুসারে s স্থানে স, sh স্থানে শ হইবে, যথা—আসল, ক্লাস, খাস, জিনিস, পুলিস, পেনসিল, মসলা, মাসুল, সাদা, সিমেন্ট, খুশি, চশমা, তক্তাপোশ, পশম, পোশাক, পালিশ, পেনশন, শখ, শৌখিন, শয়তান, শরবত, শরম, শহর, শার্ট, শেপিয়র। কিন্তু কতকগুলি শব্দে বিকল্পে ব্যতিক্রম হইবে, যথা—ইস্তাহার (ইশ্তিহার), গোমস্তা (গুমাশতাহ), ভিস্তি (বিহিশতী), খ্রীস্ট, খ্রিষ্ট (Christ)।
শ ষ স এই তিন বর্ণের একটি বা দুইটি বর্জন করিলে বাংলা উচ্চারণে বাধা হয় না, বরং বানান সরল হয়। কিন্তু অধিকাংশ তদ্ভব, শব্দে, মূল-অনুসারে শ ষ স প্রয়োগ বহুপ্রচলিত, এবং একই শব্দের বিভিন্ন বানান প্ৰায় দেখা যায় না। এই রীতি সহসা পরিবর্তন বাঞ্ছনীয় নয়। বহু বিদেশী শব্দের প্রচলিত বাংলা বানানে মূল-অনুসারে শ বা স লেখা হয়, কিন্তু কতকগুলি শব্দে ব্যতিক্রম বা বিভিন্ন বানানই দেখা যায়, যথা—সরবত, শরবত; সরম, শরম; শহর, সহর; শয়তান, সয়তান; পুলিশ, পুলিস। সামঞ্জস্যের জন্য যথাসম্ভব একই নিয়ম গ্রহণীয়।
বিদেশী শব্দের s-ধ্বনির জন্য বাংলায় ছ অক্ষর বর্জনীয়। কিন্তু যেখানে প্রচলিত বাঙ্গালা বানানে ছ আছে এবং উচ্চারণে ছ হয়, সেখানে প্রচলিত বানানই বজায় থাকিবে, যথা—কেচ্ছা, ছয়লাপ, তছনছ, পছন্দ।
দেশজ বা অজ্ঞাতমূল শব্দের প্রচলিত বানান হইবে, যথা—করিস, ফরসা (ফরশা), সরেস (সরেশ), উসখুস (উশখুস)।
-
১২. ক্রিয়াপদ
— সাধু ও চলিত প্রয়োগে কৃদন্ত রূপে ‘করান, পাঠান’ প্রভৃতি অথবা বিকল্পে ‘করানো, পাঠানো’ প্রভৃতি বিধেয়।
চলিত ভাষায় ক্রিয়াপদের বিহিত বানানের কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হইল। বিকল্পে ঊর্ধ্ব-কমা বর্জন করা যাইতে পারে, এবং -লাম বিভক্তি স্থানে -লুম বা -লেম লেখা যাইতে পারে।
হ-ধাতু
— হয়, হন, হও, হস, হই। হচ্ছে। হয়েছে। হক, হন, হও, হ। হল, হলাম। হত। হচ্ছিল। হয়েছিল । হব (হবো), হবে। হয়ো, হস। হতে, হয়ে, হলে, হবার, হওয়া।
খা-ধাতু
— খায়, খান, খাও, খাস, খাই। খাচ্ছে। খেয়েছে। খাক, খান, খাও, খা। খেলে, খেলাম। খেত। খাচ্ছিল। খেয়েছিল। খাব (খাবো), খাবে। খেয়ো, খাস। খেতে, খেয়ে, খেলে, খাবার, খাওয়া।
দি-ধাতু
— দেয়, দেন, দাও, দিস, দিই। দিচ্ছে। দিয়েছে। দিক, দিন, দাও, দে। দিলে, দিলাম। দিত। দিচ্ছিল। দিয়েছিল। দেব (দেবো), দেবে। দিও, দিস। দিতে দিয়ে, দিলে, দেবার, দেওয়া।
শু-ধাতু
— শোয়, শোন, শোও, শুস, শুই। শুচ্ছে। শুয়েছে। শুক, শুন, শোও, শো। শুলে, শুলাম। শুত। শুচ্ছিল। শুয়েছিল। শোব (শোবো), শোবে। শুয়ো, শুস। শুতে, শুলে, শোবার, শোয়া।
কর্-ধাতু
— করে, করেন, কর, করিস, করি। করছে। করেছে। করুক, করুন, কর, কর্। করলে, করলাম। করত। করছিল। করেছিল। করব (করবো), করবে। করো, করিস। ক’রতে, করে, করলে, করবার, করা।
কাট্ ধাতু
— কাটে, কাটেন, কাট, কার্টিস, কাটি। কাটছে। কেটেছে। কাটুক, কার্টুন, কাট, কাট্। কাটলে, কাটলাম। কাট্ত। কাটছিল। কেটেছিল। কাটব (কাটবো), কাটবে। কেটো, কাটিস। কাটতে, কেটে, কাটলে, কাটবার, কাটা।
লিখ্-ধাতু
— লেখে, লেখেন, লেখ, লিখিস, লিখি। লিখছে। লিখেছে। লিখুক, লিখুন, লেখ, লেখ। লিখলে, লিখলাম। লিখত। লিখছিল। লিখেছিল। লিখব (লিখবো), লিখবে। লিখো, লিখিস। লিখতে, লিখে, লিখলে, লেখবার, লেখা।
উঠ-ধাতু
— ওঠে, ওঠেন, ওঠ, উঠিস, উঠি। উঠছে। উঠেছে। উঠুক, উঠুন, ওঠ, ওঠ্। উঠলে, উঠলাম। উঠত। উঠছিল, উঠেছিল। উঠব (উঠবো), উঠবে। উঠো, উঠিস। উঠতে, উঠে, উঠলে, ওঠবার, ওঠা।
করা-ধাতু
— করায়, করান, করাও, করাস, করাই। করাচ্ছে। করিয়েছে। করাক, করান, করাও, করা। করালে, করালাম। করাত। করাচ্ছিল। করিয়েছিল। করাব (করাবো), করাবে। করিও, করাস। করাতে, করিয়ে, করালে, করাবার, করান (করানো)।
-
১৩. কতকগুলির সাধু শব্দের চলিত রূপ
— ‘কুয়া, সুতা, মিছা, উঠান, পুরান, পিছন, পিতল, ভিতর, উপর’ প্রভৃতি কতকগুলি সাধুশব্দের মৌখিক রূপ কলিকাতা অঞ্চলে অন্যপ্রকার।
যে শব্দের মৌখিক বিকৃতি আদ্য অক্ষরে (যথা পেছন, ভেতর) তাহার সাধু রূপই চলিত ভাষায় গ্ৰহণীয়, যথা— ‘পিছন, পিতল, ভিতর, উপর’। যাহার বিকৃতি মধ্য বা শেষ অক্ষরে তাহার চলিত রূপ মৌখিক রূপের অনুযায়ী করা বিধেয়, যথা—‘কুয়ো, সুতো, মিছে, উঠন, উনন, পুরনো’।
নবাগত ইংরেজি ও অন্যান্য বিদেশীয় শব্দ
Cut-এর u, cat-এর a এবং f, v, w, z প্রভৃতির প্রতিবর্ণ বাংলায় নাই। অল্প কয়েকটি নূতন অক্ষর বা চিহ্ন বাংলা লিপিতে প্রবর্তিত করিলে মোটামুটি কাজ চলিতে পারে। বিদেশী শব্দের বাংলা বানান যথাসম্ভব উচ্চারণসূচক হওয়া উচিত, কিন্তু নূতন অক্ষর বা চিহ্নের বাহুল্য বর্জনীয়। এক ভাষায় উচ্চারণ অন্য ভাষার লিপিতে যথাযথ প্রকাশ করা অসম্ভব। নবাগত বিদেশী শব্দের শুদ্ধি-রক্ষার জন্য অধিক আয়াসের প্রয়োজন নাই, কাছাকাছি বাংলা রূপ হইলেই লেখার কাজ চলিবে। যে-সকল বিদেশী শব্দের বিকৃত উচ্চারণ ও তদনুযায়ী বানান বাংলায় চলিয়া গিয়াছে সে-সকল শব্দের প্রচলিত বানানই বজায় থাকিবে, যথা— ‘কলেজ, টেবিল, বাইসাইকেল, সেকেণ্ড’।
-
১৪. বিবৃত অ
(cut-এর u)— মূল শব্দে যদি বিবৃত অ থাকে তবে বাঙ্গালা বানানে আদ্য অক্ষরে আ-কার এবং মধ্য অক্ষরে অ-কার বিধেয়, যথা— ক্লাব (club), বাস্ (bus), বার্ (bulb), সার্ (sir), থার্ড (third), বাজেট (budget), জার্মান (German), কাটলেট (cutlet), সার্কাস (circus), ফোকাস (focus), রেডিয়ম (radium), ফফরস (phosphorus), হিরোডোটস (Herodotus)’।
-
১৫. বক্র আ (বা বিকৃত এ
— cat-এর a)— মূল শব্দে বক্র আ থাকিলে বাঙ্গালায় আদিতে ‘অ্যা’ এবং মধ্যে ‘’ বিধেয়, যথা— ‘অ্যাসিড (acid), হ্যাট (hat)’।
এইরূপ বানানে ‘’-কে য-ফলা + আ-কার মনে না করিয়া একটি বিশেষ স্বরবর্ণের চিহ্ন মনে করা যাইতে পারে, যেমন হিন্দিতে এই উদ্দেশ্যে ঐ-কার চলিতেছে (hat = ट)। নাগরী লিপিতে যেমন অ-অক্ষরে ও-কার যোগ করিয়া ও (ऒ) হয়, সেইরূপ বাংলায় অ্যা হইতে পারে।
-
১৬. ঈ ঊ
— মূল শব্দের উচ্চারণে যদি ঈ ঊ থাকে তবে বাংলা বানানে ঈ ঊ বিধেয়, যথা——‘সীল (seal), ঈস্ট (east), উস্টার (Worcester), স্থূল (spool)’।
-
১৭. F ও V
স্থানে যথাক্রমে ফ ভ বিধেয়, যথা— ‘ফুট (foot) ভোট (vote)’। যদি মূল শব্দে v-এর উচ্চারণ f-এর তুল্য হয়, তবে বাংলা বানানে ফ হইবে, যথা—ফন (von)।
-
১৮. W
স্থানে প্রচলিত রীতি-অনুসারে উ বা ও বিধেয়, যথা— ‘উইলসন (Wilson), উড (wood), ওয়ে (way)’।
-
১৯. য়
— নবাগত বিদেশী শব্দে অনর্থক য় প্রয়োগ বর্জনীয়। ‘মেয়র চেয়ার, রেডিয়ম, সোয়েটার’ প্রভৃতি বানান চলিতে পারে, কারণ য় লিখিলেও উচ্চারণ বিকৃত হয় না। কিন্তু উ-কার বা ও-কারের পর অকারণে য়, য়া, য়ো লেখা অনুচিত। ‘এডোয়ার্ড ওয়ারবণ্ড না লিখিয়া ‘এড্ওআর্ড, ওঅরবণ্ড’ লেখা উচিত। ‘হার্ডওয়ার’ (hard- ware) বানানে দোষ নাই।
-
২০. S, SH
— ১১ সংখ্যক নিয়ম দ্রষ্টব্য।
-
২১. ST
—ইংরেজির st স্থানে নূতন সংযুক্ত বর্ণ স্ট বিধেয়, যথা—‘স্টেশন’।
-
২২. Z
স্থানে জ বা জ় বিধেয় ।
-
২৩. হস্-চিহ্ন
— ৪ সংখ্যক নিয়ম দ্রষ্টব্য।